ক) অবস্থান ও আয়তন ঃ গোপালপুর পৌরসভা টাঙ্গাইল জেলা সদর থেকে ৫৫ কি মি উত্তরে অবস্থিত। এর উত্তর ও পূর্বে ধনবাড়ী,মাধুপুর এবং ঘাটাইল উপজেলা,দক্ষিনে ঘাটাইল ও ভুয়াপুর উপজেলা,পশ্চিমে সরিষাবাড়ি উপজেলা ও জামালপুর সদর উপজেলা। উপজেলার মোট আওতন-১৯১.৪৮ বর্গ কি.মি।
খ) ভূ-প্রকৃতি ঃ গোপালপুর পৌরসভা ভূমি সমতল। মাটি বেলে-দো আঁশ ও এটেল ।
গ) উপজেলার সাধারন তথ্যাবলীঃ
গোপালপুর উপজেলা সম্পর্কিত সাধারন ইতিহাস ও তথ্য
কে এম মিঠু, গোপালপুর (টাঙ্গাইল) :
পরিচিতি ঃ
ব্রহ্মপুত্র পলল ভূমির চত্বর নিয়ে গড়ে উঠেছে গোপালপুর উপজেলা। ভূবিজ্ঞানীদের মতে, এ মৃত্তিকার আনুমানিক বয়স প্রায় দুই হাজার বছর। সমতল ডাংগা এবং বিল নিয়ে গঠিত এ চত্বর বর্ষাকালে সাময়িকভাবে প্লাবিত হয়। ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পলি অবক্ষেপন এবং বৈরান, ঝিনাই ও ক্ষীনকায়া আত্রাই নদীর ভাঙ্গা গড়ার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে গোপালপুর উপজেলা। যমুনার ভাঙ্গনে এ উপজেলার মানচিত্র বহুবার পরিবর্তিত হয়েছে।
নামকরন ঃ
টাঙ্গাইল জেলা পরিষদ কর্তৃক ২০০৮ সালে প্রকাশিত ‘টাঙ্গাইল জেলার স্থাননাম বিচিত্রা’ নামক গ্রন্থে গোপালপুর নামকরণ নিয়ে দু’ধরনের মতামতের উল্লে¬খ রয়েছে। প্রথমত- মুঘল শাসনামলে গোপাল শাহ নামক এক আফগান দরবেশ এখানে এসে আস্তানা গড়েন। এ গোপাল শাহের নামানুসারে নাম হয় গোপালপুর। দ্বিতীয়ত- চট্রগ্রাম থেকে আগত গোপাল চক্রবর্তী নামক এক ব্যবসায়ী নাটোরের জমিদার রাণীভবানীর নিকট হতে এ মৌজা পত্তনি নেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তার নামনুসারে নাম হয় গোপালপুর। এখানে পুর বলতে বাড়ি বা আস্তানা বুঝানো হয়েছে। শেষের অভিমত অধিকতর সঠিক বলে মনে হয়। ১৯০৪ সাল পর্যন্ত গোপালপুর মৌজা হিন্দু অধ্যুষিত ছিল এবং হিন্দু মহাজনরা বৈরান নদীর তীরে গোপালপুর মৌজার নন্দনপুর এলাকায় পাটের কারখানা গড়ে তোলেন। হিন্দু ব্যবসায়ীরা এখানকার কারখানায় বেলিং করা পাট বৈরান নদী হয়ে কোলকাতায় চালান দিত।
অবস্থান ঃ
পূর্বে ঘাটাইল ও মধুপুর উপজেলা, দক্ষিনে ভূঞাপুর উপজেলা, পশ্চিমে যমুনা নদী ও সরিষাবাড়ি উপজেলা এবং উত্তরে মধুপুর উপজেলা দ্বারা বেষ্টিত। একটি পৌরসভা এবং ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে এ উপজেলা গঠিত। গোপালপুর পৌরসভা, হাদিরা ইউনিয়ন, নগদাশিমলা ইউনিয়ন, ঝাওয়াইল ইউনিয়ন, হেমনগর ইউনিয়ন, আলমনগর ইউনিয়ন, মির্জাপুর ইউনিয়ন এবং ধোপাকান্দি ইউনিয়ন। রাজধানী ঢাকা থেকে ১৫০ কিলোমিটার এবং জেলা সদর টাঙ্গাইল থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান।
প্রশাসনিক ইতিহাস ঃ
টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা একটি প্রাচীন জনপদ। ১৯০৪ সালে প্রকাশিত শ্রী কেদারনাথ মজুমদারের অমূল্য গ্রন্থ ‘ময়মনসিংহের বিবরন’ থেকে জানা যায়, ১৭৮৩ সালে ৩৯টি পরগনা নিয়ে ময়মনসিংহ জেলা ঘোষিত হয়। গোপালপুর উপজেলাসহ উত্তর টাঙ্গাইলের পুরো অংশ তখন পুখুরিয়া পরগনার অন্তর্গত ছিল। গোপালপুর যমুনা বিধৌত হওয়ায় সকল প্রকার যোগাযোগ হতো নদী পথেই। এজন্য হেমনগর উপজেলার ঝাওয়াইল ইউনিয়নের সোনামুই গ্রামের দক্ষিনে সুবর্ণখালি গ্রামে গড়ে উঠে বিরাট নদী বন্দর। এ সুবর্ণখালি বন্দরে ভিড়তো বড় বড় স্টিমার। আসামের হাড়গিলা থেকে ঢাকার মানিকগঞ্জ পর্যন্ত এ স্টিমার চলতো। এ সুবর্ণখালি বন্দরের সাথে যোগাযোগ গড়ে তোলার জন্য ১৮৯৯ সালে ময়মনসিংহ-জগন্নাথগঞ্জঘাট রেলওয়ে চালু হয়। পিংনা থেকে সুবর্ণখালি পর্যন্ত সড়ক পাকা করা হয়। এটিই গোপালপুর থানার প্রথম পাকা সড়ক। সুবর্ণখালি থেকে পিংনা হয়ে জগন্নাথগঞ্জঘাটের রেলপথ থেকে ময়মনসিংহ হয়ে ঢাকায় যোগাযোগ হতো। আর এ সুবর্ণখালি বন্দর থেকে ৪ কিলো উত্তরে অবস্থিত যমুনা তীরবর্তী পিংনায় পৃথক থানা এবং জজ আদালত স্থাপন করা হয়। পিংনা বর্তমানে সরিষাবাড়ি উপজেলার একটি প্রসিদ্ধ ব্যবসা কেন্দ্র। তবে বর্তমানে গোপালপুর উপজেলার সুবর্ণখালি বন্দর বা জনপদের কোন অস্তিত্ব নেই। যমুনার ভাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন এ বন্দর বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে এর উত্তর পাশে সোনামুই নামক একটি জনপদ গড়ে উঠেছে। সমসাময়িক গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে যে, উনবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকে পিংনা থানা ও জজ কোর্ট স্থাপিত হয়। সেসময়ে পিংনায় একটি তহশিল কাচারি ও স্থাপন করা হয়। নৌপথে কোলকাতার সাথে যোগাযোগের সুবিধাহেতু পিংনায় এসব সরকারি অফিস আদালত স্থাপন করা হয় বলে অনেকের ধারনা। বর্তমান গোপালপুর, ভূঞাপুর, ধনবাড়ি এবং জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলার প্রশাসনিক, রাজস্ব এবং বিচার ব্যবস্থা এ পিংনা থেকেই পরিচালিত হতো। তখন গোপালপুর ছিল নাটোরের জমিদারের একটি মৌজা মাত্র। তবে কখন গোপালপুর একটি থানার মর্যাদা লাভ করে ইতিহাস সে সম্পর্কে নীরব। তবে এম আবদুল্লাহর ময়মনসিংহের নতুন ইতিহাস, অধ্যাপক খন্দকার আব্দুর রহিমের টাঙ্গাইলের ইতিহাস এবং টাঙ্গাইল জেলা পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত ‘টাঙ্গাইলের ইতিহাস’ গ্রন্থের সূত্র থেকে বলা যায়, ১৮৬৯ সালে টাঙ্গাইল থানা মহকুমা হিসাবে মর্যাদা পাওয়ার সময় গোপালপুর ও কালিহাতিতে পুলিশ ফাঁড়ির অস্তিত্ব ছিল। তখন গোপালপুর পুলিশ ফাঁড়ি ছিল পিংনা থানার অধীন। ১৯৬৯ সালে প্রকাশিত ময়মনসিংহ ডিস্ট্রিক গেজিটিয়ারের তথ্য মোতাবেক সম্ভবত ১৮৬৯ থেকে ১৮৯০ সালের কোন এক সময়ে গোপালপুর ফাঁড়ি পূর্ণাঙ্গ থানায় পরিণত হয়। ১৯০৪ সালে কেদারনাথ মজুমদারের গ্রন্থে দেখা যায় ঐ সময়ে টাঙ্গাইল সদর থানা, কালিহাতি থানা এবং গোপালপুর থানার অস্তিত্ব ছিল। তখন গোপালপুরের প্রান কেন্দ্র ছিল সুবর্ণখালি বন্দর এবং থানা শহর ছিল পিংনা। সুবর্ণখালি ও পিংনার নামডাকের জন্য মধুপুর উপজেলার আমবাড়িয়ার জমিদার হেমচন্দ্র চৌধুরী ১৮৮৫ সালে সুবর্ণখালি বন্দরের অদূরে তার রাজবাড়ি নির্মান করেন। পরবর্তীতে সুবর্ণখালি যমুনার ভাঙ্গনে বিলীন হলে শিমলাপাড়া মৌজায় এসে তিনি পুনরায় পরীদালান নামে একটি রাজবাড়ি নির্মান করেন। যেটি এখনো কোনভাবে টিকে আছে। পরবর্তীতে হেমচন্দ্র চৌধুরীর নামে এ গ্রামের নাম হয় হেমনগর। হেমচন্দ্র চৌধুরী ১৯০০ সালে হেমনগরে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। যেটি বর্তমানে শশীমুখি উচ্চ বিদ্যালয় নামে পরিচিত। এটি গোপালপুর থানার প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ‘ময়মনসিংহের বিবরণ’ গ্রন্থে দেখা যায়, ১৯০৪ সালে হেমনগর হাইস্কুলের ছাত্র সংখ্যা ছিল ২০১ জন। এ স্কুলের জন্য জমিদার হেমচন্দ্র চৌধুরী কোন সরকারি সাহায্য গ্রহন করেননি। ঐ গ্রন্থের বিবরনীতে আরো দেখা যায়, তখন গোপালপুর থানার আয়তন ছিল ৩৮৬ বর্গমাইল। লোকসংখ্যা ছিল ২ লক্ষ ৭১ হাজার ৭০২ জন। গ্রামের সংখ্যা ৬৯৫। হিন্দু ag©vej¤^x ছিল ৫৩ হাজার ১৮৬ জন। মুসলমান ছিল ২ লক্ষ ১৮ হাজার ২৩৬ জন। খৃস্টান ৫ জন ও প্রেত উপাসক ২৬৪ জন। ১৯০৪ সালে এ উপজেলায় মোট শিক্ষিত লোকের সংখ্য ছিল ১২ হাজার ৪০ জন। এর মধ্যে ইংরেজি জানা লোকের সংখ্যা ছিল ৭০০ জন। ঐ সালে গোপালপুর, কামাক্ষা মোহনপুর এবং নগদাশিমলা পোস্ট অফিস স্থাপিত হয়। এসময়েই গোপালপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিস স্থাপিত হয়। ১৯০৭ সালে সর্ব প্রথম গোপালুর-পিংনা টেলিগ্রাফ অফিস স্থাপিত হয়। ১৮৮০ থেকে ১৮৯০ সালের মধ্যে ঝাওয়াইল, নন্দনপুর, প্রফুল্ল¬নগর (বর্তমানে নগদাশিমলা ইউনিয়নের সৈয়দপুর) ও হেমনগর তহশীল কাচারি প্রতিষ্ঠিত হয়।
জমিদারী আমলে গোপালপুর ঃ
সে সময়ে পুখুরিয়া পরগনার অন্তর্গত হলেও গোপালপুর উপজেলা ছিল হেমনগর, ধনবাড়ি এবং নাটোরের রাণী হেমন্ত কুমারীর তালুক। এজন্য এ উপজেলার বাসিন্দারা তিন জমিদারের প্রজা ছিল। এজন্য গ্রামে গ্রামে অশান্তিও ছিল। প্রজা দখল নিয়ে হুরহাঙ্গামা লেগেই থাকতো।
গোপালপুর বিভক্তিকরন ঃ
১৯৭২ সালে গোপালপুর উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে ভূঞাপুর উপজেলা গঠিত হয়। ১৯৮৭ সালে গোপালপুর উপজেলার মুশুদ্দী ইউনিয়নকে মধুপুর উপজেলার অর্ন্তভূক্ত করা হয়। পরবর্তীতে মুশুদ্দী ইউনিয়ন ধনবাড়ি উপজেলার অর্ন্তভূক্ত হয়।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস